ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের পার্থক্য

ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের পার্থক্য সম্পর্কে জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে ইলেকট্রিসিটি কি! ইলেকট্রিসিটি হল বিদ্যু্‌ৎ বা তড়িৎ। ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস মূলত এই ইলেকট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাপ, আলো , শব্দ ইত্যাদি শক্তিতে রুপান্তরিত করে।

অন্যদিকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো ইলেকট্রনের প্রবাহ কে কাজে লাগিয়ে কিছু নির্দিষ্ট কাজ সমাধান করে থাকে।
আরো সহজ করে বলতে গেলে ইলেকট্রিক্যাল হলো- ইলেকট্রনের প্রবাহ অন্যদিকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস হলো এই ইলেকট্রনের প্রবাহ কে আয়ত্তে এনে নির্দিষ্ট কাজ করা। কিন্ত এই দুটোর একটা কমন নীতি রয়েছে সেটা হলো এই দুজনই বিদ্যুৎ শক্তিকে ব্যবহার করে কাজ সম্পূর্ণ করে থাকে।

বুঝার সুবিধার্থে নিচে চার্ট আকারে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মূল পার্থক্য গুলো তুলে ধরা হল। আশা করি এই চার্টের মাধ্যমে পাঠকেরা এদের পার্থক্য সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাবেন। 

পার্থক্যের মূল বিষয়ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস ইলেকট্রনিক ডিভাইস
সংঙ্গাএটাকে সংঙ্গায়িত করা যেতে পারে এভাবে, ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস
হলো সেই সব ধরনের ডিভাইস যা ইলেকট্রিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে। 
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ইলেক্ট্রনের
প্রবাহ কে নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট কাজ সমাধান করে। 
কারেন্টএসি (AC) অল্টারনেটিং বা
পরিবর্তনশীল কারেন্ট ব্যবহার
করে। 
ডিসি (DC) ডিরেক্ট বা সরাসরি
কারেন্ট ব্যবহার করে। 
ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার্যপরিবাহিতার জন্য কপার এবং
অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয় । 
অর্ধ পরিবাহী হিসেবে সিলিকন,
জার্মেনিয়াম প্রভৃতি ব্যবহার করা
হয়। 
পরিচালনা নীতিবৈদ্যুতিক শক্তি থেকে অন্য ধরনের শক্তিতে রুপান্তরিত করে। বৈদ্যুতিক শক্তি থেকে নির্দিষ্ট কাজ করে। 
ভোল্টেজ হাই ভোল্টেজের প্রয়োজন পড়ে । লো ভোল্টেজ দিয়ে পরিচালিত হয়
কারেন্ট ব্যবহার অনেক বেশি কারেন্ট ব্যবহার করায় পাওয়ার খরচ বেশি হয়। কম কারেন্ট ব্যবহার করায় পাওয়ার খরচ অনেক কম হয়।
তথ্য সংরক্ষণডাটা বা তথ্য সংরক্ষণ করে না। তথ্য সংরক্ষণ করে। 
রেসপন্স টাইমরেসপন্স বা কার্যবিধি দ্রুত পাওয়া যায়। তুলনামূলক রেসপন্স টাইম বেশি। 
প্রয়োজনীয় জায়গাইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসের জন্য
বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে।
কম জায়গাতেও ব্যবহার করা যায়। 
নিরাপত্তাইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস হাই
ভোল্টেজ ব্যবহার করায় অধিক
নিরাপত্তার সাথে ব্যবহার করতে
হয়। 
কম ভোল্টেজ দ্বারা পরিচালিত
হওয়ায় ঝুকি অনেকাংশে কম। 
ব্যবহার বিধিমেকানিক্যাল কাজে ব্যবহারের
জন্য। 
দূর্বল সিগন্যাল কে বর্ধিত করার
জন্য অথবা ডাটা কোডিং বা
ডিকোডিং করার জন্য । 
উদাহরণস্বরুপ ট্রান্সফরমার, মোটর, জেনারেটোর ইত্যাদি। ট্রানজিস্টর, ডায়োড,
মাইক্রোপ্রসেসর, অ্যামপ্লিফায়ার
ইত্যাদি।

ইলেক্টট্রিক্যাল ডিভাইসের সংঙ্গা

যে সমস্ত ডিভাইস ইলেক্ট্রিক শক্তিকে অন্য রুপে পরিবর্তন করে সেই সমস্ত ডিভাইসকে ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস বলা হয়। পরিবাহীতার জন্য এই সব ডিভাইসে মেটাল ব্যবহার করা হয়। ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস হাই অল্টারনেটিং কারেন্ট ব্যবহার করে। পাওয়ার খরচও এই সব ডিভাইসের অনেক বেশি। 

ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস অধিক ঝুকিপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্যতা কম হয়ে থাকে। কারন এই সমস্ত ডিভাইস থেকে দূরত্ব বজায় না রাখলে মারাত্নক বিপর্যয় ও শক লাগার সম্ভাবনা থাকে । ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইসের সাইজ অনেক বড় হওয়ায় এর জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন পড়ে। উদাহরণস্বরুপ: ফ্যান একটি ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস যা ইলেক্ট্রিক্যাল শক্তি কে কাজে লাগিয়ে ঘূর্ণায়মান গতি শক্তিতে রুপান্তরিত করে। ইলেক্ট্রিক্যাল বাল্ব, টিউব লাইট বিদ্যুৎ শক্তিকে আলোতে রুপান্তরিত করে। 

ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের সংঙ্গা

যে সমস্ত ডিভাইস ইলেক্ট্রনের প্রবাহ কে নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করে সেই সমস্ত ডিভাইস ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস হিসেবে পরিচিত। ইলেক্ট্রনিক্স শব্দের অর্থ হল ইলেক্ট্রিক ফিল্ডে ইলেক্ট্রনের প্রবাহের আচরণ কেমন হবে সেটা নিয়ে অধ্যয়ন করা।

ইলেক্ট্রনিক উপাদান সমূহকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো অ্যক্টিভ কম্পোনেন্ট এবং অন্যটি প্যাসিভ কম্পোনেন্ট। যে সমস্ত কম্পোনেন্ট শক্তিকে ডেলিভারি করে তাদেরকে অ্যাক্টিভ এবং অন্যদিকে শক্তি বা কারেন্ট রিসিভ করে যে সমস্ত ডিভাইস তাদেরকে প্যাসিভ কম্পোনেন্ট বলে।

ইলেক্ট্রনিক্স-এ তিনটি প্রধান অ্যাকটিভ কম্পোনেন্ট ও দুটি প্যাসিভ কম্পোনেন্ট রয়েছে-

রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ও ইন্ডাক্টর হল অ্যাকটিভ এবং টিউব ডিভাইস ও সেমিকন্ডাক্টর (অর্ধপরিবাহী) হল প্যাসিভ কম্পোনেন্ট। 

‌রেজিস্টার কারেন্টের প্রবাহ কে বাধা প্রদান করে এবং ক্যাপাসিটর ইলেক্ট্রিক্যাল কারেন্ট সঞ্চয় করে। ইন্ডাক্টর বৈদ্যুতিক আবেশ বৃদ্ধি করে। টিউব ডিভাইস ও সেমিকন্ডাক্টর ইলেক্ট্রনের প্রবাহের চলাচলের জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। টিউব এবং সেমিকন্ডাক্টরের মধ্য বৈদ্যুতিক ফিল্ড তৈরি করলে ইলেক্ট্রন শক্তিশালী হয় এবং বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। উদাহরণস্বরুপ: ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস হিসেবে ব্যবহৃত ট্রানজিস্টর দূর্বল সিগন্যাল কে বৃদ্ধি করে। ফটোডায়োড আলোক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে।

সাদৃশ্যতা

ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মধ্যে আপনারা পার্থক্য দেখলেন ও বুঝলেন। আসলে এই দুটি ডিভাইসের মধ্য ব্যাপক পার্থক্য থাকলেও এদের মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। প্রধান যে মিলটি রয়েছে তা হলো এই দু-ধরনের ডিভাইস-ই তাদের নিজ নিজ কাজ করার জন্য ইলেক্ট্রনের প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। ভোল্টেজ ট্রন্সমিট করার জন্য এরা ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে থাকে।

পার্থক্য শুধু – ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস ইন্সট্রুমেন্ট (Instrument) এবং পাওয়ার (Power) দু-ধরনের ট্রান্সফরমার-ই ব্যবহার করে। অপরদিকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস শুধু মাত্র ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার (Instrument Transformer) ব্যবহার করে। 

2 thoughts on “ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের পার্থক্য”

  1. ধন্যবাদ, এরকম আরো তথ্যবহুল লিখা নিয়ে হাজির হবেন এটাই কামনা।

    Reply

Leave a Comment